বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দাবাড়ু bobby fischer কেন পাগল হলো?
বন্ধুরা, শচীন টেন্ডুলকারের জন্মই হয়েছিল ক্রিকেটার হওয়ার জন্য । লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর জন্মেছিলেন ফুটবলকে আরো ভালোবাসানোর জন্য এবং অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের জন্ম হয়েছিল মহাবিশ্বকে আমাদের অন্য ভাবে বোঝানোর জন্য এবং রবার্ড জেমস পিশারে জন্ম হয়েছিল দাবা খেলার শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য
![]() |
bobby fischer |
তিনি খুব সহজেই এই শ্রেষ্ঠত্বের শিরোনাম অর্জন করেছিলেন । তিনি নিঃসন্দেহ হয়ে উঠেছিলেন পৃথিবীর মধ্যে দাবা খেলার শ্রেষ্ঠ খেলোয়ার । তিনি অবিশ্বাস্যকর ভাবে এই খেলায় ভীষণ উন্নতি করতে থাকেন । ববিফিশার দরকাতীতভাবে সর্বশেষ্ঠ প্রতিভা গিয়েছেন দাবা খেলায় ।
অনেকে মনে করেন শুধুমাত্র জিনের ওপর ভিত্তি করেই ফিশার দাবা খেলায় সবথেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠেছিলেন । কারণ তার মার রেজিনা মেডিসিনে পিএইচডি করেছিলেন এবং সাতটি আলাদা আলাদা ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন এবং তার বাবা হ্যারম্যান ছিলেন একজন বায়োফিজিস্ট । তবে অনেকে মনে করেন পল নামক একজন জীব পদার্থবীদের সাথে ফিশারের মা রেজিনা পরকীয়া সম্পর্কে জড়ানোর জন্য ববি ফিশারের জন্ম হয় ।
আজ তোমার অজানার এই ভিডিওটিতে আমরা জানবো হবে ফিশার কে নিয়ে । কারণ এই মানুষটি আপনাকে অনেক কিছু শেখাবে । এই ভিডিওটিতে সম্পূর্ণ দেখার অনুরোধ রইলো । তো চলুন শুরু করা যাক ।
ববির জন্ম হয় 1943 সালে এবং তার জন্মের কিছু পরেই তার বাবা এবং মা আলাদা হয়ে যায় । তারপর তার দিদি জোয়ান এবং সে তার মায়ের কাছে লালিত পালিত হতে থাকে । রেজিনা অর্থাৎ তার মা অত্যন্ত জটিল মহিলা ছিলেন ।
তিনি ভীষণ ই রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন । সেই জন্য এফবিআই একাধিকবার তদন্ত করেছে রেজিনা কে নিয়ে । এফবিআই রেজিনা কে সন্দেহ করত । কারণ তাদের মনে হয়েছিল রেজিনার কমিউনিষ্টদের সাথে গুপ্ত লিংক রয়েছে । ববি কোনদিনই তার মায়ের মনের কাছের ছিলেন না ।
এরপর যখন ববির মাত্র 16 বছর বয়স হয় তখন রেজিনা তাকে রেখে চলে যায়, যাতে তিনি তার পেশা আরো ভালোভাবে পালন করতে পারে । রেজিনা তার ষোল বছর বয়সী ছেলেকে ব্রুকলিনের সবচেয়ে বিপদজনক এলাকায় একা একা বড় হয়ে ওঠার জন্য রেখে চলে যান । সত্যিই খুবই দুঃখের দিনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল ববি ।
তবে যাই হোক, তিনি যখন মাত্র ছয় বছরের ছিলেন তখন থেকেই তিনি দাবা খেলতে ভালোবাসতেন । যা পড়ে তার ভবিষ্যত বদলে দেয় ।
ববির দিদি একদিন একটা দাবা কিনে আনে এবং দাবার প্যাকেজিং এর উপর লেখা ইনস্ট্রাকশন পড়ে তারা এই খেলাটি শেখে । তারা দুজনে তখন সারা দিন এই খেলাটি খেলতে থাকে এবং চমকপ্রদভাবে ববি খেলাটিতে যথেষ্ট পারদর্শী হয়ে ওঠে ।
কিন্তু খুব শীঘ্রই তার দিদি এই খেলাটির থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং ববির সাথে দাবা খেলা বন্ধ করে দেয় । তবে এই সময়ের মধ্যেই দাবা খেলা হয়ে ওঠে ববির নেশা । তিনি নিজে নিজে একা একা এই খেলাটি খেলতে থাকে । এইভাবে কেটে যায় প্রায় দুই বছর ।
যখন রেজিনা তার ছোট ছেলের দাবা খেলার প্রতি আবেগ লক্ষ্য করেন, তখন তিনি এই বিষয় নিয়ে একটু চিন্তিত হয়ে পড়েন । কারণ ববি সারাদিন একাই থাকতো এবং দাবা খেলত ।
তখন রেজিনা একটি স্থানীয় কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দেন । তার সাথে দাবা খেলার সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের জন্য । যাতে তাদের সাথে দাবা খেলতে পারে । তবে রেজিনার মূল উদ্দেশ্য ছিল যাতে এই খেলার সূত্রের ববির কিছু বন্ধু হয়ে যায় । এরপর ববি দাবা প্রতিযোগিতায় আমন্ত্রণ পায় এবং এই প্রতিযোগিতায় যারা অংশগ্রহণ করেছিল তারা প্রত্যেকেই ইউএসএ'র সবথেকে বড় বড় দাবা খেলোয়াড় ছিল ।
ববির প্রথম ম্যাচ ম্যাক্স পাবের সাথে পরে । ম্যাক্স পাবে ছিলেন তৎকালীন সময়ের চেস মাস্টার । কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ববি তাকে 15 মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে ফেলে । আর তখন বয়স ছিল মাত্র 7 বছর । সেই সময় সেই স্থানটিতে brooklyn চেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট উপস্থিত ছিলেন । তিনি ববির অসামান্য প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান । তিনি ববিকে তাদের ক্লাবের সাথে যুক্ত করে নেন । কারণ তিনি মনে করেছিলেন ববিকে যদি আরেকটু ভালো করে এই খেলা দেখানো যায় তাহলে ববি অনেক বড় দাবা খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারবে ।
আর এখান থেকেই ববি তার প্রতিভাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় । এরপর থেকে অনেক স্কিলফুল দাবা ট্রেইনাররা তাকে আরো ভালোভাবে খেলাটি শেখাতে শুরু করে এবং মাত্র নয় বছর বয়সে ববি প্রথম চেস টুর্নামেন্ট জয় করে । এই জয়টি সত্যিই অনেক বড় এচিভমেন্ট ছিল ববির জন্য ।
এরপর ববি তাদেরকেউ হারিয়ে দেয়, যারা দশকের পর দশক ইউ এস চেস চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসছিল । ববি 14 বছর বয়সে ইউএস চেস চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় এবং পনের বছর বয়সে সে হয়ে ওঠে একজন লিটিল গ্র্যান্ড চেস মাস্টার । তিনি পরপর সাতবার ইউএস চেস চ্যাম্পিয়নশিপ জেতে ।
মাত্র 15 বছর বয়সে ববি এমন কিছু করে দেখাচ্ছিলো যা সম্পূর্ণ বিশ্বকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল ।
ববি চেস ছাড়া আর কোন কিছু চোখে দেখতে পারত না । সে সারাদিনই এই দাবা খেলা নিয়ে বিভিন্ন বই পড়তেন, যাতে তিনি আরো ভালো করে এই খেলাটি রপ্ত করতে পারেন । এমনকি তিনি রাশিয়ান ভাষা শিখে নিয়েছিলেন যাতে রাশিয়ান ভাষায় লেখা চেস সম্পর্কিত বইগুলি পড়তে পারেন ।
তিনি 16 বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে দেন । যাতে তিনি দাবা খেলা কি পুরো সময়টা দিতে পারেন । এই ভাবেই চলতে থাকে এবং ধাপে ধাপে তিনি হয়ে ওঠেন দাবার শ্রেষ্ঠ খেলোয়ার ।
কিন্তু এর পরেই এমন কিছু ঘটে যা তার জীবন এবং ক্যারিয়ারকে শেষ করে দেয় । ববির মা ছিলেন একজন জিউস কিন্তু ববি ছিলেন তীব্র জিউস বিরোধি । তিনি জিউসদের ঘৃনা করতেন । ধীরে ধীরে তার এই ঘৃণা চরমে পর্যায়ে পৌঁছে যেতে থাকে এবং তিনি এমন কিছু শব্দের প্রয়োগ করে যার মাশুল তাকে সারা জীবন দিতে হয় ।
এই ঘটনার পর তার ক্যারিয়ার ধ্বংসের দিকে এগোতে থাকে । 1960 দশকের পর থেকে তাকে আর সেভাবে টুর্নামেন্টগুলোতে ডাকা হতো না এবং বহুদিন তিনি কারো সাথে দাবা খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি এবং এভাবে একা একা থাকতে থাকতে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং খুবই সেল্ফরিস্টার্ট হয়ে পড়েন তিনি এতটাই সেল্ফরিস্টার্ট হয়ে পড়েন যে তিনি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ এর ফাইনাল ম্যাচ থেকে মাঝ সময় খেলা শেষ না করে উঠে চলে যান ।
যেখানে তিনিই খেলাটি যেতার মুখে ছিলেন অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন । এই ঘটনার পর তার ক্যারিয়ারে ধ্বস নামে । এরপর 1970 এর দশকে তিনি আবার কাম ব্যাক করেন । তিনি আবারও ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেন সোভিয়েত গ্র্যান্ডমাস্টার বরিস পাসকিল ও বেল্ড লারশনের সাথে । এবং ববি তাদেরকে বাজে ভাবে হারিয়ে দেই । স্কোর লাইন ছিল 0-6 । টপলেভেলের চেস কম্পিটিশনের স্কোরলাইনে এই স্কোর পূর্বের ইতিহাসে কোনদিনই আসেনি । এইভাবে তিনি পরপর 20 জন গ্রান্ডমাস্টারকে ধারাবাহিকভাবে হারায় ।
এই ঘটনাকে সোভিয়েত চেস গ্র্যান্ডমাস্টার মতভিন্নেক একটি মিরাক্কেল বলে আখ্যায়িত করেন । পৃথিবীর অন্য কোন চেস মাস্টার কখনোই ববির জয়ধারার কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারেনি এবং মনে করা হয় ববির এই রেকর্ড গুলিকে ভাঙা একটি অসম্ভব ব্যাপার । এরপর 1972 সালে ওয়ার্ল্ড চেস চ্যাম্পিয়নশিপে স্পাসকি ও ববির খেলা হয় ।
কিন্তু এবার স্পাসকি অনেক শক্তিশালী ছিলেন । কারন এবার তার পেছনে ছিল সোভিয়েত চেস মেশিনের সবথেকে ভালো ভালো পাঁচজন গ্র্যান্ডমাস্টার, যারা ববির টেকনিক, অ্যাটাকিং স্কিল ও উইথ পয়েন্ট গুলোকে খুজে বের করে এবং স্পাসকিকে সাহায্য করে ববিকে হারানোর জন্য । কিন্তু অপরদিকে ববি ছিল একা । প্রথম ম্যাচে হেরে যান এবং দ্বিতীয় ম্যাচেও প্রায় হারতে বসেছিলেন । এই ম্যাচ গুলি ছিল সেই সময়ের খুবই চর্চার বিষয় । যার জন্য মিডিয়াগুলোও খুব সক্রিয় ভাবে এই ম্যাচগুলোকে ব্রডকাস্ট করত ।
সেকেন্ড ম্যাচের মাঝপথে ববি আবেদন করে যাতে ম্যাচগুলোকে একটু প্রাইভেট জায়গায় খেলা হয় । কারণ এতগুলি ক্যামেরা তাদের উপরেই ফোকাস থাকার জন্য ববি কনসেনট্রেট করতে পারছিল না । অনেক ঝামেলার পর প্রাইভেট একটি স্থানে ম্যাচটিকে পুনরায় শুরু করা হয় । এরপর ববি 7 টি ম্যাচ জেতেন, 11 টি ম্যাচ ড্র হয় এবং একটি ম্যাচ হারেন ।
আরো একবার অনবদ্য ভালো খেলে ববি ফিশার হয়ে ওঠেন এগারতম ওয়ার্ল্ড চেস চ্যাম্পিয়ন। তিনি এতটাই ভালো খেলেন যে ষষ্ঠ ম্যাচটিতে ববির জয়ের পর তার অপনেন্টস পাসকি উঠে দাড়িয়ে হাততালি দেন । অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন তৎকালীন সময়ে ববি কিভাবে গোটা বিশ্বের দাবা খেলা কে নিজের হাতের মুঠোয় রেখেছিলেন ।
কিন্তু 1975 সালে তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দাবা খেলোয়াড়ের শিরোনাম হারান । একজন ইয়াং সোভিয়েত গ্র্যান্ড চেসমাস্টার আনাতোলি কারপভের সাথে দাবা খেলায় সে হেরে যায় । এই ঘটনা তার মনে এতটাই আঘাত আনে যে তিনি পরবর্তী 20 বছরে একবারও পাবলিকলি দাবা খেলিননি ।
এইভাবে দুই দশক কেটে যাওয়ার পর 1992 সালে তিনি আবারও জনসমক্ষে আসেন এবং স্পাস্কির সাথে দাবা খেলেন ইয়োগোস্লাভিয়াতে । তিনি এই ম্যাচটি খুব সহজেই জীতেও জান । কিন্তু এই ম্যাচটির জন্য তাঁর উপর নেমে আসে বিশাল বিপদ । কারণ সেই সময় আমেরিকার আইন অনুযায়ী ইয়োগোস্লাভিয়াতে কোন রকম কমের্সিয়াল অ্যাক্টিভিটিস করা আইনত দণ্ডনীয় ছিল । এই আইনের ব্যাপারে ববি সব কিছুই জানতেন ।
তিনি ওয়াল্ড প্রেসের সামনে এই আইনের প্রমানপত্রের ওপর জনসমক্ষে তুলে ফেলেন এবং আজেবাজে কথা বলেন । এরপর তিনি এই কাজের জন্য গ্রেপ্তার হয়ে যান । জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি হাঙ্গেরি এবং জাপানে থাকতে শুরু করেন । কিন্তু সেখানেও ঘটলো বিপত্তি । 2004 সালে এক্সপায়ার্ড পাসপোর্ট দিয়ে ট্রাভেল করবার জন্য জাপানে তার নয় মাসের জেল হয় । জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে তিনি আইসল্যান্ডের সরকারের কাছে সেই দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করে এবং তা মঞ্জুরও হয়ে যায় ।
এরপর তিনি তার জীবনের বাকি সময় আইসল্যান্ডেই অতিবাহিত করেন এবং 2008 সালে তিনি পরলোকগমন করেন । যদিও এই সময়ের মধ্যেই তার কেরিয়ার ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু এখোনো দাবা খেলায় তাকে একজন আইডল হিসেবেই দেখা হয় । ববি ফিশার যে বুদ্ধিমত্তা ও টেকনিক দিয়ে দাবা খেলতেন, সেইরকম প্রক্রিয়া এখনো দাবার ইতিহাসে দেখা যায়নি ।
তবে হ্যাঁ, কখনো কিছুতে খুব দক্ষ হওয়া মানে এটা নয় যে সেচ্ছাতেই যা খুশি তাই করা যাবে বা বলা যাবে । আর ববি ফিশারের এই জীবনী আমাদেরকে ডিসিপ্লিন হওয়ার পরামর্শ দেয় । কিন্তু শেষ বয়সে তিনি তার কার্যকলাপের জন্য আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন ।
আজকের ভিডিওটি এই টুকুই । আপনারা অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন যে ববি ফিশারের জীবনী আপনাদের কেমন লাগলো । আর এরকমই আরো কিছু অজানা বিশেষ মানুষ সম্পর্কে আপনারা জানতে চান কিনা? সর্বশেষে থ্যাংকস ফর ওয়াচিং । Stay happy stay good ।